Rabindranath Tagore


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও বালক সত্যজিৎ রায় (সাল অনুল্লিখিত)।

রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন ৭০ বছর এবং সত্যজিতের ১০ বছর বয়স তখন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয় শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায়। বালক সত্যজিতের বয়স যখন ১০, তখন পৌষমেলা দেখার জন্য শান্তিনিকেতন গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন মা সুপ্রভা রায়। নতুন অটোগ্রাফের খাতা কেনা হয়েছে। ছোট্ট সত্যজিতের ভীষণ শখ, প্রথম আটোগ্রাফটা নেবেন রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে। এক সকালে মায়ের সঙ্গে সত্যজিৎ চলে গেলেন উত্তরায়ণে। পারিবারিকভাবে ঠাকুর পরিবার আর রায় পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুন্দর সম্পর্ক ছিল। সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের একজন। আর পিতা সুকুমার রায় ছিলেন বিশ্বকবির পরম স্নেহভাজন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তোলা বিশ্বকবির কিছু কিছু ছবির ফটোগ্রাফার ছিলেন সুকুমার রায় স্বয়ং।

১০ বছরের বালক সত্যজিৎ রায়, যাকে মানিক নামেই রবীন্দ্রনাথ চিনতেন, বিশ্বকবির সামনে কিছুটা ইতস্তত ভঙ্গিতে অটোগ্রাফের খাতাটা নিয়ে দাঁড়াতেই কবি পরম স্নেহে কাছে টেনে নেন তাকে। জানতে চাইলেন, খাতা নিয়ে সে কেন এসেছে? বালক মানিক খাতাটা এগিয়ে দিয়ে তার ইচ্ছার কথাটা ব্যক্ত করলেন। কবি তার দিকে কিছুক্ষণ তাকালেন। তারপর পরম স্নেহে বললেন, ‘এটা থাক আমার কাছে; কাল সকালে এসে নিয়ে যেও।’

কবির আদেশ অনুযায়ী মানিক পরদিন কবির বাড়িতে গেলেন। টেবিলের উপর চিঠি-পত্র, খাতা-বইয়ের ডায়েরি। তার পেছনে বসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। মানিককে দেখতেই তার ছোট্ট বেগুনি খাতাটা খুঁজতে লাগলেন সেই ভিড়ের মধ্যে। মিনিট তিনেক হাতড়ানোর পর বেরোলো খাতাটা। তারপর সেটা তাকে দিয়ে মা সুপ্রভা রায়ের দিকে চেয়ে বললেন, ‘এটার মানে ও আরেকটু বড় হলে বুঝবে।’ খাতা খুলে বালক সত্যজিৎ আট লাইনের ভুবনজয় করা কবিতাটা দেখল। বিশ্বকবির ঘর থেকে বের হয়ে উত্তরায়ণের সামনের যে বিশাল আমগাছ, তার নিচে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে আবৃত্তি করতে লাগলো-

"বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছে সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু॥"

একটানে আটটি লাইন আবৃত্তি করে কিছুক্ষণ থামল সে। তারপর দম নিয়ে লাইনগুলোর নিচের শব্দগুলো উচ্চারণ করল- ৭ই পৌষ ১৩৩৬ শান্তিনিকেতন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ততক্ষণ মা এসে পেছনে দাঁড়িয়েছেন। জানতে চাইলেন লাইনগুলোর মানে বুঝেছে কি-না। সে তখন অল্প মাথা ঝাঁকিয়ে জানাল, ‘কিছুটা’।
 

Comments

Popular posts from this blog

ভারতীয় ফটোসাংবাদিক কিশোর পারেখ: ৭১' র মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঐতিহাসিক ছবির জন্য বাংলাদেশ আর ইতিহাস যার কাছে ঋণী।